টাইমপাস ( Timepass )
টাইমপাস (Timepass)
সাইফুল ইসলাম মামুন
°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°
রূপনগর গ্রাম।
যার রূপের কোন শেষ নেই। চারিদিকে সবুজে ঘেরা অপরূপ সৌন্দর্যে ভরপুর এক গ্রাম। সেই গ্রামে ছিল এক রূপবতী কন্যা।যার নাম রূপা।সে ছিল খুব সহজ সরল। রূপা ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ে। ক্লাসে তার অনেক বান্ধবি আছে সে তাদের সাথে মিলে মিশে চলতো। তার সব বান্ধবীরা বাজে ছেলেদের সাথে মিশতো,কথা বলতো,আড্ডা দিতো এবং প্রেম করে সময় নষ্ট করতো। কিন্তু রূপা এসব একদম পছন্দ করতো না। কি আর করার আছে,একসাথে পড়তে হলে তো সহপাঠীদের সাথে মিশতে হবেই।
এভাবে চলতে চলতে হঠাৎ একদিন রূপার এক বান্ধবী রিয়া তাকে একটা ছেলের সাথে প্রেম করার প্রস্তাব দিল এবং বললো সে তোকে অনেক পছন্দ করে। কিন্তু রূপা কোনকিছু না ভেবেই এক কথায় না বলে দিলো।
কয়েক মাস পর রূপা ক্লাস সেভেন এ উঠে গেলো। নতুন ক্লাসে এখন তার রোল দুই। সকলের কাছ থেকে সে অনেক প্রশংসা পেল ভালো ফলাফলের জন্য। এভাবে কেটে গেল রূপার আরও কিছুদিন। সপ্তম শ্রেণিতে উঠে রূপার চলাফেরা আগের বান্ধবীদের সাথেই। রূপা দেখলো তার সব বান্ধবীরাই প্রেম করছে। তা দেখে তার ফুটন্ত হৃদয়ে বসন্তের বাতাস নাড়া দিতে লাগলো। রূপা ভাবলো আমিতো পড়ালেখা চলাফেরা ঠিক রেখেই চলছি। আমি যদি আমার বান্ধবীদের মত প্রেম করি তবে সমস্যা কী ? আমিতো শুধু Timepass করবো। এতে অসুবিধা নেই। এমন ভাবতে ভাবতে তার মনকে সে বুঝিয়ে নিল।
পরের দিন ক্লাসে সে তার বান্ধবী লিজাকে বললো যে, আমিও তোমাদের মত প্রেম করবো। লিজা বললো, কি ব্যাপার? তোমার মনে হঠাৎ প্রেমের জাগলো কিভাবে?
যাইহোক, আমি দেখি তোমার জন্য কিছু করতে পারি কি না। কাল ক্লাসে তোকে জানাবো।
রূপা ক্লাস শেষে বাড়িতে চলে এলো। কিন্তু তার যেনো আজকের দিনটি কিছুতেই কাটছে না। সে রাতে শুয়ে ভাবতে লাগলো, কখন রাত শেষ হবে আর কখন সে ক্লাসে যাবে। অনেক প্রতিক্ষার পর সকাল হলো। রুপা অন্য দিনেে তুলনায় আজ এক ঘন্টা আগেই স্কুলে হাজির, কিন্তু লিজা এখনো আসেনি।
অবশেষে, বহুল প্রতিক্ষার পর লিজা আসলো। রূপা এগিয়ে গিয়ে বললো, কি খবর? আজ এতো দেড়ি করে আসলি যে? লিজা বললো, কিরে, এতো তাড়া কিসের? আসিতো ঠিক সময়েই আসছি, তোকে দেখে তো মনে হচ্ছে তুই সারা রাত ঘুমস নি, আর এখন অধির আগ্রহে আছিস।
রূপা বললো, কই? না তো। লিজা বললো, থাক্, আর সাক্ দিয়ে মাছ ঢাকতে হবে না। একটা ভালো খবর আছে। রূপা বললো, কি খবর? লিজা বললো, শুভকে তোর কথা বলছিলাম, সে তোর সাথে প্রেম করতে রাজি হয়েছে। রূপা কিছুই বললো না, নিরবতা যেনো তার সম্মতির কথাই বলে দিল।
এভাবে ধীরে ধীরে রুপার সাথে শুভর প্রেম চলছিল। কথা হচ্ছিল,দেখা হচ্ছিল, রূপার সময় কেটে যাচ্ছিলো।
কিছুদিন পর, রূপা একটা মোবাইল কিনলো। এবার ফোনে কথা বলে Timepass করা শুরু হলো। এ যেনো Timepass করার মহা এক মাধ্যম। রূপার যেনো একটা ছেলের সাথে কথা বলে Time এর সৎ ব্যবহার হচ্ছে না। তার আরও ছেলে বন্ধু প্রয়োজন Timepass করার জন্য।
এবার আর রূপা তার কোন বান্ধবীর নিকট ধারনা দিতে হয়নি, এখন সে এ বিষয়ে যথেষ্ট Expert, রুপা কিছু ছেলের নাম্বার Collect করে, কল দিতে দিতে আরও দুই জন বন্ধু পেয়ে গেলো। তাদের নাম রিজভী ও রিদয়। রূপা তাদের সাথে শুভর মতই কথা বলে যাচ্ছিলো। সামনে রূপার বার্ষিক পরিক্ষা, কিন্তু এসব যেন রূপার একদমই মনে নেই। সময় পার হতে হতে পরিক্ষা শুরু হয়ে গেল। রূপা যেনো পরিক্ষার মধ্যেও Timepass করছে।
পরিক্ষা শেষে, কিছু দিন পর, ফলাফল বের হলো। কিন্তু মেধাবী ছাত্রী রূপা আর আগের অবস্থানে সেই। দুই রোল থেকে রূপা এখন ক্লাস Eight এ তেরো রোল এ। স্কুল থেকে শিক্ষকরা বলাবলি করছে, ক্লাসের Second এর কিভাবে এতো অবনতি হতে পারে। ঠিক তেমনি পরিবার থেকেও রূপাকে অনেক বকাবকি করেছে।
রূপার কিছুদিন মন খারাপ ছিল, কিন্তু তারপর আবার আগের মত হয়ে গেল।
রূপা এখন ক্লাস Eight এ নিয়মিত ক্লাস করছে। এ বছর ক্লাস Eight এ একজন নতুন ছাত্রী ভর্তি হয়েছে, নাম তার জান্নাতারা।
রূপার ভালো বন্ধু জান্নাতারা। জান্নাতারা এসে দেখলো, ক্লাসের মেয়েরা ঠিকমতো ক্লাস করে না, পড়াশোনা করে আসেনা। এসব দেখে জান্নাতারা খুব হতাশা হলো এবং কি করা যায় ভাবতে লাগলো।
জান্নাতারা রূপাকে একদিন বললো, আচ্ছা বন্ধু! তুমি ছেলেদের সাথে কথা বলো কেন? আর এমন প্রেমে ডুবে আছো কেন?
রূপা বললো, আমিতো তাদের সাথে প্রেম করছি না, Just Timepass করছি। এছাড়া আর কিছু না।
জান্নাতারা কিছুদিন রূপার খোঁজ-খবর নিলো ভালো করে। তারপর জান্নাতারা রূপাকে একদিন একটা বই উপহার দিল। বইটার নাম ^প্রিয়তমা^। বইটার নাম এবং Cover দেখে রূপার পছন্দ হলো। সে জান্নাতারাকে Thanks জানানো।
বইটা যেন রূপাকে আকর্ষণ করছে। তাই সেদিনই বইটা পড়া শুরু করলো। পড়তে পড়তে রূপা সেদিনই ১০০ পৃষ্ঠা পড়ে ফেললো।
পরেরদিন রূপা ক্লাসে আসার সময় বইটা সাথে নিয়ে আসলো এবং জান্নাতারাকে আবারও ধন্যবাদ জানানো। ক্লাসের ফাঁকে রূপা বইটা পরতে লাগলো। জান্নাতারার এ দৃশ্যটি খুব ভালো লাগলো। সে ভাবলো,রূপাকে আরও কিছু বই উপহার দিবে। রূপা অল্প কয়েকদিনের মধ্যে বইটা শেষ করে ফেললো।
জান্নাতারা রূপাকে আরও একটা বই উপহার দিল। নাম Enjoy Your Life. রূপার এই বইটাও খুব পছন্দ হলো। সে এইটাও পড়া শুরু করলো। রূপা যেনো হঠাৎ ভুলে গেলো তার Timepass করার মাধ্যমটা। সে যেনো ভিন্ন এক পথে Timepass করছে এখন।
রূপার মধ্যে জেগে উঠেছে এক অপ্রতিরোধ্য বই পড়ার নেশা। রূপা জান্নাতারার কাছ থেকে ভালো ভালো কিছু বইয়ের নাম শুনে সেগুলো কিনে পড়তে পড়তে তার সাহিত্য ভান্ডার এতো পরিমাণ হলো যে, সেগুলো দিয়ে একটা Personal Library গড়ে তুললো।
অবশেষে রূপা Timepass করার জন্য এক উত্তম পথ বেছে নিলো।
0 Comments