অসৎ চেয়ারম্যান
অসৎ চেয়ারম্যান
সাইফুল ইসলাম মামুন
°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°
কোন এক দেশে সকলের পরিচিত এক গ্রাম ছিল, নাম শান্তিনগর।
গ্রামের অধিকাংশ লোক মধ্যবিত্ত পরিবারের,তারা দিনে এনে দিন খায়। গ্রামটি ছিলো সবুজ-স্যামলে অপরূপ সৌন্দর্যে ভরা। মানুষও শান্তিতে বসবাস করছিল।
একমাস পরে এলাকায় নির্বাচন।
ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে অনেকে প্রার্থী হয়েছে। তাদের মধ্যে সবাই বিভিন্ন আশা দিচ্ছে,ওয়াদা করছে,মানুষকে সাহায্য করছে এবং কেউ কেউ সাধারণ মানুষের মতো চলাফেরা শুরু করছে। তারা এটা বুঝাতে চায় যে, তারা সাধারণ মানুষের ব্যাথার ব্যথিত,তাদের দুঃখ-কষ্ট বুঝতে পারে এবং নির্বাচিত হলে মানুষের সমস্যা সমাধানে সক্ষম। অনেকে আবার বলছে,আপনাদের জীবন-মান পাল্টে দেবো।আপনাদের সাহায্য সহযোগিতা করবো।এমন সব কথার ফুলঝুরি শুনে লোকজন এক প্রার্থীকে বিশ্বাস করে ফেলে। তার নাম মজিদ সরদার। ধনী-গরীব সকলকে মজিদ সরদার টাকা দিতে লাগলো। তার কাছে টাকা যেনো এখন কাগজের টুকরো ছাড়া আর কিছুই না। কিন্তু বেশিরভাগই বড় বড় নেতাদের পকেটে ডুকছে।
অবশেষে নির্বাচনের দিন ঘনিয়ে এলো, আগামীকাল নির্বাচন। নির্বাচনেরদিন এলাকার লোকজন সকাল আটটা থেকে ভোট দেওয়া শুরু করলো,সারাদিন ভোট হলো। রাতে ফলাফল প্রকাশ হলে জানা গেলো, মফিজ সরদার বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছে। এলাকার লোকজন ও খুশি,কারন তাদের পছন্দের প্রার্থীর জয় হয়েছে।
লোকজন ভাবলো সামনের দিনগুলো তাদের শান্তিতে কাটবে।
কিছুদিন পর---
লোকজন তাঁদের সমস্যা নিয়ে চেয়ারম্যানের কাছে গিয়ে সন্তোষজনক জবাব/বিচার পায় না এবং অসহায়রা সাহায্যেরর জন্য গিয়ে ঠিকমতো সাহায্য পায় না।
শুরু হলো চেয়ারম্যানের প্রতি মানুষের ক্ষোভ।
তার কিছুদিন পর----
এলাকার অসহায় মানুষদের জন্য সরকারি চাল এলো চেয়ারম্যানের নিকট। ২৫ তারিখ সোমবার, ইউনিয়ন অফিস থেকে সকলকে চাল দেওয়া হবে।
সোমবার সকাল থেকে চালের জন্য অফিসে লাইন দিয়েছে সকলে।
কিন্তু চেয়ারম্যান সাহেব না এলে চাল দেয়া শুরু হবে না,
দুপুর ১২ টা বেজে গেলো, এখনো চেয়ারম্যানের কোন খোঁজ নেই।
লোকজন প্রচন্ড রৌদ্রে সকাল থেকে দাড়িয়ে আছে।
অবশেষে ১২ঃ৩০ এ চেয়ারম্যান আসলো।
এসে লাইনের প্রথম থেকে চাল দেয়া শুরু করলো,কিন্তু চাল দেয়ার কথা ছিল ২০ কেজি করে, দিচ্ছে ০৮ কেজি করে।
যারা চাল নিয়ে যাচ্ছে, তাদের সবার মুখ অন্ধকার।
০৮ কেজির কথা শুনে অনেকে চাল না নিয়েই চলে গেছে, তারা বলছে ০৮ কেজি নেওয়ার চেয়ে না খেয়ে থাকা ভালো।
ঐদিন কেউ চাল নিয়ে আর কেউ না নিয়েই চলে যায়।
দিন দিন চেয়ারম্যানের প্রতি এলাকাবাসীর ক্ষোভ আরও বাড়তে থাকে।
তার কিছুদিন পর----
এলাকারর উন্নয়নের জন্য সরকার থেকে বিরাট এক বাজেট আসে,কিন্তু চেয়ারম্যান তা থেকে খুব কমই উন্নয়নের জন্য খরচ করে,বাকি টাকা নিজের পকেটে ডুকায়।
এভাবেই চেয়ারম্যান জনগণের সম্পদ আত্মসাৎ করা শুরু করলো।এলাকার প্রভাবশালী লোকজন এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বলে, নির্বাচনে অনেক টাকা খরচ হয়েছে, সেই টাকা উঠতে হবে না? আমি কি আমার পকেটের টাকা দিয়ে জনগনের সেবা করবো নাকি?
আরও কিছুদিন পর----
এলাকায় এক ভয়াবহ বন্যা হলো, যার ফলে লোকজন কর্মহীন হয়ে পড়ে, খাবারের এবং থাকার সমস্য তৈরি হয়।
বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোক, সংগঠন সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়।তেমনিভাবে সরকার থেকেও বড়সড় একাটা বাজেট আসে।গতকাল চেয়ারম্যান অফিসে কয়েকশ টন চাল ট্রাকভর্তি করে এসেছে।লোকজন এবার কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলছে, অন্ততঃ অনাহারে মরতে হবে না।
পরেরদিন----
চাল আনতে লোকজন চেয়ারম্যান অফিসে লাইন দিয়েছে।
চাল আনতে যারা গেছে,তাদের মধ্যে প্রথম কিছু লোকদের দেয়ার পর,চেয়ারম্যান বললো,চাল শেষ হয়ে গেছে,আপনারা চলে যান।
আবার আসলে আপনাদের দেয়া হবে।লোকজন রাগে,ক্ষোভে চলে এলো।
তার কয়েকদিন পর---
সরকারি লোক আসলো বন্যাকবলিক লোকদের দেখতে।এসে জানতে পারলো অনেকে অনাহারে আছে এবং চেয়ারম্যানের অপকর্ম।তারা উপর মহলে বিষয়টি জানালে সাথে সাথে RAB এর একটি ফোর্স শান্তিনগর গ্রামে চলে আসে এবং চেয়ারম্যানের বাড়ি তল্লাশি শুরু করে ৫০০টন চাল পেলো।
সাথে সাথে চেয়ারম্যানকে RAB ধরে নিয়ে গেল আর চালগুলো লোকদের মাঝে বিতরণ করে দিল।
লোকজন পরবর্তিতে চেয়ারম্যান নির্বাচনের ক্ষেত্রে সতর্ক হয়ে গেল আর বললো, চেয়ারম্যান নির্বাচনের ক্ষেত্রে সৎ, চরিত্রবান ও আমানতদারী লোক ছাড়া উপায় নেই।
0 Comments